ঢাকা , বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ , ২৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
হেরা ফেরি ৩-তে ফিরছেন টাবু বাশার-তিশার নতুন রোমান্সের গল্প ‘বসন্ত বৌরি’ ওজন কমাতে সার্জারি, প্রাণ গেল মেক্সিকান ইনফ্লুয়েন্সারের ‘স্কুইড গেম’ অভিনেত্রী লি জু-শিল আর নেই বিচ্ছেদের পর ফের নতুন প্রেম খুঁজছেন মালাইকা অরোরা? দেশের প্রেক্ষাগৃহে ‘বলী’ আসছে ৭ ফেব্রুয়ারি হামলার পর প্রথমবার জনসমক্ষে সাইফ আলী খান অবশেষে প্রকাশ্যে এলো চিত্রনায়িকা পপির স্বামী-সন্তানসহ ছবি সমালোচনা সহ্য না হলে উপদেষ্টা পদ ছেড়ে রাজনৈতিক দল করেন-রিজভী লালমনিরহাটে বিয়ে করে ফেরার পথে বরের মৃত্যু পুঁজি রক্ষার আন্দোলনে বিনিয়োগকারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা কমাতে, একীভূতকরণে নজর দেয়ার সুপারিশ বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে আরও কমার আশঙ্কা বান্দরবান সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণে কিশোরের পা বিচ্ছিন্ন ট্রেনের ধাক্কায় ট্রাকের চালক সহকারী নিহত জগন্নাথ হলে সরস্বতী পূজামণ্ডপ পরিদর্শনে দুই উপদেষ্টা রমজান মাসে গ্যাস বিদ্যুতের বড় সংকটের শঙ্কা বাংলাদেশকে সহায়তা করছে ব্রিটিশ সংস্থা তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের ধৈর্য ধরতে হবে-নাহিদ ইসলাম লোকজনকে অতিষ্ঠ করে ফেলছে তিতুমীরের শিক্ষার্থীরা-স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছাত্রদের রাজনৈতিক দল নিয়ে নানা মত

  • আপলোড সময় : ০৪-০২-২০২৫ ০৪:২০:৪৫ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ০৪-০২-২০২৫ ০৪:২০:৪৫ অপরাহ্ন
ছাত্রদের রাজনৈতিক দল নিয়ে নানা মত
* ছাত্ররা কিংস পার্টি গড়ছে, যার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর ড. ইউনূস : রাশেদ * ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দল গঠনকে স্বাগত জানালেন জিএম কাদের * ছাত্র রাজনৈতিক দলে জায়গা হবে না আ’লীগের * তরুণরা দল চালাবে তবে সিনিয়র সিটিজনদের পরামর্শ নেয়া হবে চলতি ফেব্রুয়ারি মাসেই ঘোষণা আসতে পারে ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দলের। জুলাই গণ অভ্যুত্থানের সম্মুখ সারির যোদ্ধারা বর্তমানে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের কার্যক্রম নিয়ে ব্যস্ততম সময় পার করছেন। শিক্ষার্থীরা এই দলটির প্রতি উচ্চ প্রত্যাশা পোষণ করছে। তবে উঠছে নানা প্রশ্ন: কেমন হতে পারে দলটির রূপরেখা। ছাত্রদের রাজনৈতিক দল ঘোষণার আগেই পক্ষে-বিপক্ষে সমালোচনার ঝড় বইতে শুরু করেছে। ছাত্রদের দল নিয়ে দেশের রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ শুরু হয়েছে। শিক্ষার্থীদের এ দলের নেতৃত্বে আসতে পারেন ছাত্র-জনতা আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম। নতুন এ দল বিএনপির ভোট ব্যাংককে টার্গেট করে এগোতে চায়। তবে নতুন রাজনৈতিক দলের ঘোষণা দেবেন জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। রংপুরে শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারতের মধ্যদিয়ে এবং চট্টগ্রামে শহীদ ওয়াসিম আকরামের কবর পর্যন্ত হেঁটে লংমার্চের মাধ্যমে এ ঘোষণা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। এরই মধ্যে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম নিজেও জানিয়েছেন, যদি রাজনীতিতে আসেন তবে অবশ্যই উপদেষ্টা পদ ছাড়বেন। এছাড়া নির্বাচন নিয়েও বিভিন্ন পক্ষের দ্বিধাবিভক্ত বক্তব্য ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে। বিএনপি চায়, দেশের স্থিতিশীলতার স্বার্থে যৌক্তিক সময়ে নির্বাচন এবং সেটি যত দ্রুত হবে ততো ভালো। বিএনপির মতো বড় দল ছাড়াও আরও অনেকগুলো দলের একই চাওয়া। জামায়াতে ইসলামী অবশ্য এখন পর্যন্ত নির্বাচন নিয়ে সরকারকে চাপে রাখতে চাচ্ছে না। যদিও এ দলটিও উপযুক্ত সময়ে নির্বাচনের পক্ষে। ছাত্ররা যে নতুন দল গঠন করবে সেটির নেতা কে হবেন, তা নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা চলছে। এ আলোচনায় সামনের দিকেই আছেন তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। বলা হচ্ছে, তিনি উপদেষ্টার পদ ছেড়ে নতুন এই রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে আসতে পারেন। তবে শিক্ষার্থীদের কোনো পক্ষ বিষয়টি পুরোপুরি নিশ্চিত করেনি। এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নাগরিক কমিটির একজন প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে তিন শতাধিক থানা কমিটি গঠন করা হয়েছে। এখন লক্ষ্য পাড়া-মহল্লাভিত্তিক কর্মকাণ্ড বিস্তৃত করা। তিনি বলেন, রাজধানীর পার্শ্ববর্তী জেলা নারায়ণগঞ্জের সাতটি থানায় আমাদের কমিটি হয়ে গেছে। এখন এ সাত থানাকে সমন্বয় করে আমরা একটা সাংগঠনিক টিম গঠন করছি। এটার মাধ্যমে আমরা জেলা বা মহানগর কমিটি তৈরি করবো। তারপর মহানগরের অধীনে যতগুলো ওয়ার্ড আছে, প্রতিটি ওয়ার্ডে কমিটি করবো। এরপর গ্রামভিত্তিক কমিটি হবে। আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে একটা রাজনৈতিক দল তৈরি করা। নাগরিক কমিটি নিজে দল হবে না। কিন্তু আমাদের ভেতর থেকেই দলটা তৈরি হবে আলাদা নামে। আমাদের কাজ হবে পাড়া-মহল্লায় প্রান্তিক মানুষের কাছে সেই দলের খবর পৌঁছানো, দলটাকে পরিচিত করে তোলা, রাজনীতির পরিবেশ তৈরি করা। তবে জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারা আশাবাদী তৃণমূল পর্যন্ত বিস্তৃত একটি বড় রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশের ব্যাপারে যেখানে মূল ভূমিকায় থাকবে তারা। পাশাপাশি সেই দলে ভূমিকা থাকবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনেরও। যদিও নাগরিক কমিটি কিংবা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কোনোটিই শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক দলে রূপান্তরিত হবে না। বরং স্বতন্ত্র সংগঠন হিসেবেই থেকে যাবে। এ দু’টি সংগঠন থেকে যারা রাজনীতিতে অংশ নিতে ইচ্ছুক তারা নতুন দলে যোগ দেবে। জানা গেছে, বাংলাদেশের বাস্তবতায় গত প্রায় চার দশকে আওয়ামী লীগ-বিএনপির মতো সারা দেশে বিস্তৃত বড় কোনো রাজনৈতিক দল তৈরি হয়নি। বিভিন্ন সময় বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল গঠিত হলেও সেগুলো আওয়ামী লীগ-বিএনপির মতো বড় দলে রূপান্তরিত হতে পারেনি। এছাড়া বাংলাদেশে বাম-ডান, জাতীয়তাবাদী থেকে শুরু করে ইসলামপন্থি আদর্শের রাজনীতিও আগে থেকেই উপস্থিত আছে। ফলে ছাত্রদের নতুন দল কোন আদর্শকে সামনে রেখে এগোবে সেটা একটা বড় প্রশ্ন। একইসঙ্গে দলের শীর্ষ স্থানীয় নেতা কারা হবে সেটা নিয়েও আলোচনা আছে। আরও জানা গেছে, মূলনীতি এবং কর্মসূচি যা-ই হোক, চাঁদাবাজি-দুর্নীতির বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ বিরক্ত থাকায় এ ইস্যুতে আত্মপ্রকাশের আগে লংমার্চ কর্মসূচি দিচ্ছেন তারা। জাতীয় নাগরিক কমিটি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সূত্রগুলো জানিয়েছে, দল গঠনের পরও নাগরিক কমিটি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সক্রিয় থাকবে। আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক না থাকলেও নতুন রাজনৈতিক দলের সহযোগী হিসেবে কাজ করবে। সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শেখ হাসিনার পতন হলেও চাঁদাবাজি, দখলদারি বন্ধ হয়নি। এতে গণঅসন্তোষ রয়েছে। বিএনপি নেতাকর্মীদের চাঁদাবাজি-দখলদারত্বের জন্য দায়ী করে তারা বলছেন, এটি জনগণের কাছে তুলে ধরা হবে। নতুন দল গঠন ঘিরে এরই মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিএনপি। এরইমধ্যে দলটির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, তারা যেভাবে রাজনৈতিক দল করতে চাচ্ছে তাতে তো অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতার ব্যাপারে বিএনপি মহাসচিব যে কথা বলেছেন, তা সত্যি হচ্ছে। এখন কিন্তু জামায়াতসহ অন্য রাজনৈতিক দলের নেতারাও একই কথা বলছেন। ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানালেন কখন ছাত্ররা দল গঠন করবে: আগামী ত্রয়োদ্বশ নির্বাচনকে সামনে রেখে ছাত্ররা দল গঠন করবে। এ লক্ষ্যে তারা দেশজুড়ে লোকজনকে সংগঠিত করছে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। বাংলাদেশে আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে একটি বিদেশী গণমাধ্যমের সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, তিনি নির্বাচনের সম্ভাব্য যে দু’টি সময়ের কথা বলেছেন, তা ভালো সময়। কারণ, তিনি জাতীয় ঐক্য ধরে রাখছেন। তিনি এটা থেকে বিচ্যুত হতে চান না। তিনি বলেন, একটি সম্ভাবনা হলো, ছাত্ররা নিজেরাই একটি দল গঠন করবে। শুরুতে যখন তারা উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করছে, তখন আমি তিনজন ছাত্রকে আমার উপদেষ্টা পরিষদে নিয়েছিলাম। আমি বলেছিলাম, যদি তারা দেশকে “প্রাণ” দিতে পারে, তাহলে তারা উপদেষ্টা পরিষদে বসতে পারে এবং প্রাণ দেয়ার জন্য কী করছে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তারা ভালো কাজ করছে। অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, দল গঠনের প্রক্রিয়ার মধ্যে হয়তো তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। এটাও একটা বিপদ। কারণ, রাজনীতি শুরু করলে সব ধরনের রাজনীতিবিদ তাদের সঙ্গে মিশে যাবে। তাই আমরা জানি না তারা আমাদের দেশে যে রাজনীতি, তা থেকে নিজেদের দূরে রাখতে পারবে কি না। এ ধরনের সুযোগ আছে, যা আমাদের নিতে হবে। তবে ছাত্ররা প্রস্তুত। তারা প্রচারণা চালাচ্ছে। তারা দেশজুড়ে লোকজনকে সংগঠিত করছে। যা বলছে জাতীয় নাগরিক কমিটি: জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল আমিন বলেছেন, ‘আমরা ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি নাগাদ দল গঠন করবো। সেই লক্ষ্যে আমাদের কাজ চলছে। বেশ ভালোভাবেই চলছে দল গঠনের কাজ। ইতোমধ্যে আন্দোলনের অংশীজন ছাত্র-জনতার সঙ্গে আলোচনা চলছে। গতকাল রোববার বেলা ১২ টায় নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে স্মারকলিপি প্রধান শেষে সাংবাদিকদের কাছে এই মন্তব্য করেন তিনি। এর আগে সকালে নারায়ণগঞ্জ শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে পদযাত্রা করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আসেন জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতাকর্মীরা। বক্তব্যে আব্দুল্লাহ আল আমিন বলেন, আমরা ৮ দাবি নিয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছি । নারায়ণগঞ্জ শহরে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হচ্ছে। চাঁদাবাজি, ছিনতাই, যানজট বাড়ছে। এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এছাড়াও শহীদদের স্মরণে এখানে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের দাবি জানানো হয়েছে। খুনিদের গ্রেফতারের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ছাত্র জনতার উপর গুলি চালানো সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের দাবি জানানো হয়েছে জেলা প্রশাসককে। যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি, তাদের আত্মা শান্তি পাবেনা যদি ফ্যাসিবাদী শক্তি ও দোসরদের শাস্তি না হয়। এসময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য শওকত আলী, তুহিন মাহমুদ, তামিম আহমেদ, নারায়ণগঞ্জের প্রতিনিধি আহমেদুর রহমান তনু, সোহেল খান সিদ্দিক, জুবায়ের হোসেন, ফজলে রাব্বি, রনি খন্দকার, রাকিব প্রমুখ। শিক্ষার্থীদের নতুন দলে জায়গা হবে না আ’লীগের: দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে জুলাই গণ অভ্যুত্থানের সম্মুখ সারির যোদ্ধারা বর্তমানে নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠনের কার্যক্রমে ব্যস্ত। শিক্ষার্থীরা এ রাজনৈতিক দলটির প্রতি উচ্চ প্রত্যাশা পোষণ করছে। তবে উঠছে নানা প্রশ্ন: কেমন হতে পারে দলটির রূপরেখা। এরইমধ্যে জাতীয় নাগরিক কমিটি ইতোমধ্যে ২৭০টি উপজেলা থানা কমিটি গঠন করেছে এবং বাকি উপজেলা কমিটিগুলো গঠনের কাজ চলছে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনও একটি কমিটি গঠন করেছে। প্রশ্ন উঠছে, এসব কমিটিতে কারা স্থান পাচ্ছেন এবং স্থান পাওয়ার যোগ্যতা কী হবে? জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন বলেন, আমরা জনগণকে কী দিতে পারছি, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। জনগণ আমাদের কর্মসূচি অনুযায়ী নির্বাচন করবে এবং তাদের ভোট আমাদের কাজে লাগবে। ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দলটি আগামী নির্বাচনে কাঙ্খিত পরিবর্তন আনার প্রত্যাশা জাগিয়েছে, যা বাংলাদেশে নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতার সূচনা করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহবায়ক আরিফুল ইসলাম বলেন, আমরা ২৭০টি উপজেলা থানা কমিটি গঠন করেছি। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ এর সাথে যারা সরাসরি যুক্ত নন, তারা যেকোনো রাজনৈতিক দল থেকে আসতে পারবেন এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। তরুণদের মধ্যে রাজনীতিতে আসার আগ্রহ অনেক বেড়েছে এবং তারা এখন রাজনীতির মূল অঙ্গনে সক্রিয় হতে চাচ্ছেন। কেন তারা রাজনীতির দিকে ঝুঁকছেন? জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, তরুণরা দলের নেতৃত্ব দেবেন। তবে যারা বয়োজ্যেষ্ঠ, তাদের পরামর্শ আমাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তবে এ সময় আরিফুল ইসলাম মন্তব্য করেন, যারা পড়াশোনা করতে বিদেশে গিয়েছিলেন, তারা এখন দেশে ফিরে রাজনীতি করতে চাচ্ছেন। দেশের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করতে চাচ্ছেন, কারণ আগে রাজনীতি ছিল মূলত দু’দলীয়, বিশেষ করে পরিবারতান্ত্রিক। এই পরিবর্তনটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক সমীকরণকে আগামী দিনে নতুনভাবে গড়ে তুলবে। নতুন রাজনৈতিক দলের ইস্তেহারের বিষয়ে জানতে চাইলে, আরিফুল ইসলাম বলেন, আইনের শাসন, নাগরিক অধিকার, বিচারবিভাগের স্বাধীনতা, ক্ষমতার ভারসাম্য, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নিরপেক্ষতা এবং শক্তিশালীকরণের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হবে। ছাত্ররা কিংস পার্টি গড়ছে, যার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর ড. ইউনূস: ২৪ এর আন্দোলন একটা গোষ্ঠী চুরি করেছে অভিযোগ করে গণ-অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেছেন, এ কাজে সহায়তা করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। রোববার ‘বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা: উত্তরণে রাজনৈতিক ভাবনা’ শিরোনামে জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এই মন্তব্য করেন। রাশেদ বলেন, ছাত্ররা এখন কিংস পার্টি গঠন করছে, ড. ইউনূস সেই দলের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর। দেশ থেকে বৈষম্য দূর হয়নি বরং দিন দিন বাড়ছে বলেও অভিযোগ করেন রাশেদ খান। তিনি বলেন, এ সরকারের আমলে কীভাবে পাঠ্যবইয়ে আদিবাসী শব্দ এলো? এর দায় ড. ইউনূসকে নিতে হবে। ২৪ এর আন্দোলন চুরি হয়ে গেছে অভিযোগ করে রাশেদ প্রশ্ন তোলেন, তিনি (ড. ইউনূস) কীভাবে বিদেশে একজনকে নিয়ে মাস্টারমাইন্ড হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিলেন? ১৫ বছরের আন্দোলনে আমরা তাকে দেখিনি। এর আগে ৩১ জানুয়ারি বিকেলে রাজধানীর জুরাইনে এক দোয়া মাহফিলের অনুষ্ঠানে গণ-অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান অভিযোগ করেন, শহীদদের অবদান ভুলে ছাত্র উপদেষ্টারা রাজনৈতিক দল গঠনে ব্যস্ত। তিনি বলেন, শহীদ পরিবারের পাশে না দাঁড়িয়ে ছাত্র উপদেষ্টাদের মনোযোগ নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের দিকে। তিনি আরও বলেন, তোমরা বিশাল বিশাল হেডাম দেখাও নতুন নতুন দল গঠন করবা। এই আহত ভাইদের এবং শহীদ পরিবারের খোঁজ কেন তোমরা নেওনি। এ সময় দলটির সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, আগামীর বাংলাদেশে যেন গণ-অভ্যুত্থানের চেতনাধারী কোনো সংগঠন এবং ব্যক্তি যেন গণ-অভ্যুত্থানকে নিজের বা দলের সম্পদে পরিণত করতে না পারে, সেই বিষয়ে আমাদের সচেষ্ট এবং সজাগ আওয়াজ থাকতে হবে। তিনি বলেন, হাসিনার পতনের জন্য দল-মত নির্বিশেষে এমনকি যারা রাজনীতি করে না, তারাও গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নিয়েছিল। কাজেই যারা আজ আবার হাসিনাকে পুনর্বাসন করতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে। এখন পর্যন্ত আহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা করতে না পারায় ক্ষোভও প্রকাশ করেন নুর। ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দল গঠন নিয়ে যা বললেন জিএম কাদের: ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দল গঠন নিয়ে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেছেন, রাজনৈতিক দল গঠনের অধিকার প্রতিটি নাগরিকেরই আছে। তাদের মতাদর্শ তুলে ধরে জনগণের রায় চাইবে, এটাতে আপত্তির কিছু নেই। নতুন প্রজন্মের যে তরুণরা রাজনৈতিক দল গঠন করতে চাচ্ছে, তাদের আমি শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। তারা সামনে এগিয়ে যাক, দেশ ও জাতি তাদের কাছ থেকে ভালো কিছু পাবে, এটাই আমার প্রত্যাশা। শনিবার দুপুরে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের বনানীস্থ কার্যালয়ে জাতীয় পার্টি হবিগঞ্জ জেলা শাখার সাংগঠনিক মতবিনিময় সভায় পার্টি মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান বলেন, ক্ষমতায় থেকে রাজনৈতিক দল গঠন এবং ক্ষমতায় থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ এটা দেশের জনগণ আর গ্রহণ করতে রাজি নয়। এজন্যই নির্বাচনের সময় নিরপেক্ষ ব্যবস্থা, তত্ত্বাবধায়ক বা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দরকার হয়। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের বক্তব্যে এটা পরিষ্কার যে, ছাত্র সমন্বয়কদের মনোনয়নে এ সরকার গঠিত হয়েছে। ছাত্রদের দল গঠনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সমর্থন আছে একথাও স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, যথাযথ কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে। ফলে যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন বা দল গঠনে সক্রিয়ভাবে ভূমিকা রাখবেন শুধুমাত্র সেসব ব্যক্তিরা সরকার ত্যাগ করলেই, সে দল সরকারি আনুকূল্য পাবে না, এটা কতটুকু বিশ্বাসযোগ্য? এ কারণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আগামী নির্বাচনে নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে পারবে, এমন দাবি করতে পারেন না বলে মনে করি। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিজেদের নিরপেক্ষ দাবি করলেও রাজনৈতিক দলগুলো ও জনগণের কাছে সেটা কতটুকু বিশ্বাসযোগ্য হবে- তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ আছে। জিএম কাদের বলেন, দেশের মানুষ চায় নির্বাচনের সময় যেন লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড থাকে, সবার জন্য সমান সুযোগ থাকে; কোনো বিশেষ দল যেন সরকারি অর্থ ও সরকারের ক্ষমতার প্রভাব দিয়ে নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে না পারে, এ নিশ্চয়তা।

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স